ঈদের দিনের স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার

May 13, 2025

ঈদের দিনের স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার

ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। নতুন জামাকাপড় পরে হই-হুল্লোড়, নামাজ শেষে সবার সঙ্গে কোলাকুলি বা দিনভর ঘুরে ঘুরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। সঙ্গে সেমাই, ফিরনি, পায়েস ও হরেক রকম মিষ্টির স্বাদ নেওয়া। এমন খুশি খুশি আমেজেই কাটে ঈদের দিন। বছরে দুবার ঈদের আনন্দ বয়ে আসে প্রত্যেক মুসলমানের ঘরে। এর মধ্যে একটি হলো ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এটি। দীর্ঘ এক মাস রোজা পালনের পর আসে খুশির এই দিনটি। 

ঈদের দিনে আনন্দের বেশির ভাগ জুড়েই থাকে নানা ধরনের খাবারদাবার। দীর্ঘদিন রোজা রাখার পর ঈদে খাবার দাবার বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। না হলে বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি বা গ্যাস, পাতলা পায়খানাসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে শরীরে। তবে ঈদের সময় খাবারদাবারের ভুল থেকে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হলে পুরো আনন্দটাই মাটি হয়ে যেতে পারে। সময় ও পুষ্টি বিবেচনায় এই সময় ঈদের খাবার কেমন হওয়া উচিত তা জেনে রাখলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো যাবে অনেকাংশে। কিন্তু সারা মাস রোজা থাকার পরে হঠাৎ ঈদের দিন হরেক রকম মুখরোচক খাবার আমাদের পেট সহ্য না-ও করতে পারে। তাই ঈদের দিনটিতেও খেতে হবে একটু রয়েসয়ে। ঈদের আয়োজনে রাখতে পারেন স্বাস্থ্যকর এই খাবারগুলো- 


ঈদের সকালের   খাবার: 

পুরো একমাস একই নিয়মে রোজা রাখার পর ঈদের সকালে যেহেতু প্রথম খেতে হচ্ছে, সেহেতু হঠাৎ বেশি খাবার খেয়ে ফেলা ঠিক নয়। পরিমাণে বেশি খেয়ে ফেললে বদহজম, পেটে অস্বস্তিসহ আরো নানা সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তার আগে জানা দরকার, ঈদের দিন সকালে খাবার মেন্যু কী হওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, ঈদের দিন সকালের খাবার মেন্যু যাতে একটু হালকা হয়, সে ক্ষেত্রে ফিরনি হতে পারে খুব ভালো মেন্যু। দুধ, চাল ও গুড় দিয়ে ঘরেই তৈরি করে নিতে পারেন ফিরনি, যা থেকে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও মিনারেলস পাওয়া যায়। দুধের বানানো যেকোনো রেসিপি প্রোটিনের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে। ফলের জুস বা ফল থাকতে পারে সকালের খাবার মেন্যুতে। 

এছাড়া তেলছাড়া পাতলা পরোটা আর সবজিও হতে পারে ভালো মেন্যু। সারা দিন অনেক খাবার খেলেও মেন্যুতে সবজি থাকে না বা কম থাকে। তাই সকালেই সবজি খেয়ে নিলে দৈনিক সবজির চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে। ঈদ-সকালের নাশতায় রুটির পাশাপাশি থাকতে পারে সবজির নরম খিচুড়ি। তার সঙ্গে মুরগির তরকারি বা ডিম ভুনা রাখা যায়। তবে সকালের খাবারকে স্বাস্থ্যকর বানাতে একটা সবজি রাখতে হবে অবশ্যই। সবশেষ মিষ্টি খাবারে থাকতে পারে স্বল্প মিষ্টিযুক্ত সেমাই, পায়েস, ফিরনি বা পুডিং ইত্যাদি।  



ঈদের দুপুরের খাবার: 

এক মাস রোজার পর ঈদের দিন দুপুরে খাবার মেন্যুতে অনেক বেশি আইটেমের খাবার না রাখাই শ্রেয়। বরং দুই থেকে তিনটি খাবার ভালোভাবে রান্না করলে পুষ্টি, তৃপ্তি, ক্যালরি সবই পূরণ সম্ভব। এ জন্য থাকতে পারে মাছের একটি আইটেম, যেমন: মাছের চপ বা কাটলেট, মাছের দোলমা, মাছের কোরমা, গ্রিল ফিশ বা মাছের কাবাব ইত্যাদি। এতে মাংস খাওয়ার প্রবণতা কিছুটা ঠেকানো যায়। 

কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা মেটানোর জন্য দুপুরের মেন্যুতে রাখতে পারেন সাদা পোলাও বা খিচুড়ি। তবে কেউ বিরিয়ানি করলে সাইড ডিশ যেন বেশি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবুজ সালাদ বা টক দই ও সবজির সালাদ দুপুরের মেন্যুতে অবশ্যই রাখুন, যা ভিটামিনস ও মিনারেলস প্রদান করে। 

তবে ঈদের দিন দুপুরে সময়মত খাবার খাওয়া হয়ে ওঠে না। ঘোরাঘুরি আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় খাওয়ার কথা অনেকেই ভূলে যান বা দেরি করে ফেলেন। এ ব্যাপারে সবারই সচেতন হওয়া উচিৎ। যারা ডায়াবেটিস রোগী তাদেরকে অবশ্যই খাবার সময়মত খেতে হবে। অন্যদেরও তাই। কেন না খাবার সময় মত না খেলে অনেক রকমের শারীরিক সমস্যা হতে পারে, যেমন গ্যাস্ট্রিক, মাথা ব্যাথা, খাবার হজমে সমস্যা ইত্যাদি। 




ঈদের রাতের খাবার :  

অনেকেই ঈদের দিনগত রাতে তেমন খেতে পারেন না। আবার যা খেতে পছন্দ করেন, তাও হয়তো ঠিকমতো খেতে পারেন না। তাই রাতের মেন্যুতে খুব বেশি আইটেম রাখবেন না। রুটি বা সাদা ভাতের সঙ্গে মুরগি বা গরুর কাবাব, সবজি বা মাংসের অন্য কোনো রেসিপি থাকতে পারে। আবার একটু ভিন্নধর্মী খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে চায়নিজ ফুডও ঘরে তৈরি করে নিতে পারেন। কেননা এ জাতীয় খাবারে তেল-মসলা কম থাকে।

কেউ যদি মনে করেন, রাতে ভালো খাবার খাবেন তাহলে অবশ্যই মাংসের গ্রিল বা বারবিকিউ বা এয়ার ফ্রাই এ মাংস ঝলসে নিতে পারেন। রাতে দাওয়াতে গেলেও ভালো খাবার, আবার বাড়িতে থাকলেও ভালো খাবার তাই খাওয়ার পর একটু হেঁটে নেওয়া ভালো। বাড়িতে থাকলে মাংসের একটি স্বাস্থ্যকর পদ সঙ্গে একটি সবজির পদ রাখতে পারেন। 

মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা এক নয়। অনেকেই অনেক রোগে আক্রান্ত। তাই অনেকেরই খাবার আলাদা হবে। তাই যার যেই খাবারে নিষেধাজ্ঞা আছে, তাকে সেটা মেনে খেতে হবে। খাবার গ্রহণে পরিমাণ আর খাবারের টাইপ বুঝে খেতে হবে।


শিশুদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ
শিশুদের ক্ষেত্রে তেমন বাধানিষেধ থাকে না। তাদের জন্য এই আনন্দের আয়োজন হয় অন্যরকম। কিন্তু বেশি চিনি, বেকারির খাবার, কোমল পানীয় যাতে মাত্রা ছাড়া না খায়, সেদিকে মনোযোগ রাখা জরুরি। 


যেসব খাবার খাবেন না- 

এক.   একমাস রোজা থাকার পর খাওয়া ক্ষেত্রে কিছু বিষয় এড়িয়ে যেতে হবে। যেমন-অনেকেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। এটা করবেন না।

দুই.   ঈদের দিন সবার বাসায় মাংস থাকে, এ জন্য সারাদিন অনেক মাংস খাওয়া হয়ে যেতে পারে। সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। দিনে ৭০ গ্রামের বেশি মাংস খাওয়া উচিত নয়। প্রতি বেলায় ঘরে রান্না করা মাংস ২-৩ টুকরার বেশি খাবেন না।

তিন.   বেশি তেলে বা দৃশ্যমান জমানো চর্বিসহ মাংস রান্না করবেন না। রান্না করতে হবে কম তেলে। 

চার.   নানা সোডা পানি বা সফট ড্রিংকস পান নয়, এসবের পরিবর্তে চিনি ছাড়া নানা মৌসুমি ফলের জুস, বোরহানি গ্রহণ করা উত্তম। 

পাচঁ.   ঘিয়ে ভাজা পরোটার পরিবর্তে সেঁকা রুটি খেতে পারেন। এছাড়াও ঈদে বাইরের সব খাবার এড়িয়ে চলুন।


উপসংহার 

তিনবেলা ভারি খাবার না খেয়ে যে কোনো একবেলা হালকা খাবার যেমন সবজির স্যুপ, সবজি ও রুটি রাখতে পারেন।   ঈদে বাড়িতে নানারকম খাবার থাকে তাই বাইরের সব খাবার এড়িয়ে চলুন। ঈদে তুলনামূলক বেশি খাওয়া হয় সে জন্য অবশ্যই সকালে কিংবা বিকালে ব্যায়াম করে বা হেঁটে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার চেষ্টা করুন।  


রেফারেন্স 


Leave a comment

Comments will be approved before showing up.

Subscribe
🐄 কোরবানির ঈদের দারুণ অফার!