শরীর ও মন ভালো থাকে যেসব খাবারে

May 13, 2025

শরীর ও মন ভালো থাকে যেসব খাবারে

সুপারফুড কী?  

সুপার ফুড বলতে এমন খাবারগুলোকে বোঝায় যা পুষ্টিতে ভরপুর অর্থাৎ ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ঘনত্ব অন্যান্য খাবারের তুলনায় অনেক বেশি। এই কারণে দ্রুত শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এদের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি বাড়ছে জনপ্রিয়তাও। সুপারফুড এর মাধ্যমে যারা নিয়মিত ডায়েট ফলো করেন তাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা মেটাতেও সক্ষম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় সুপারফুড যে কোনো ধরনের শারীরিক ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। বর্তমানে সুপারফুড নিয়ে মানুষের তেমন মাথাব্যথা না থাকলেও গবেষকদের ধারণা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে খুব শীঘ্রই গুরুত্ব পাবে সুপারফুড। 

চিকিৎসকদের মতে, এই খাবারগুলো ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ করতে এবং স্বাস্থ্য ও জীবনের মান এর উন্নতি করতে সহায়তা করে। যারা শারীরিকভাবে দুর্বল তাদের জন্য এই ধরণের খাবারের অনেক সুফল রয়েছে।   

দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কিছু সুপার ফুড অন্তর্ভুক্ত করলে আপনি পুষ্টির পাশাপাশি পাবেন বাড়তি উদ্যম। আসুন জেনে নিই কোন কোন   সুপারফুড খাবেন নিয়মিত-  


সবুজ শাক
পালং শাককে বলা হয় সুপার ফুড। পাশাপাশি অন্যান্য সবুজ শাক ও সবজিতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, কে, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এসব উপকারী উপাদান হার্ট, চোখ এবং হাড় ভালো রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদের সুস্থ রাখতেও সহায়তা করে। 

মধু 

মধু একটি প্রাকৃতিক সুপারফুড যা বহু শতাব্দী ধরে এর ঔষধি গুণাবলীর জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মধুতে অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্যও পাওয়া গেছে যা গলা ব্যথা এবং কাশি প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে। এটি শক্তির একটি দুর্দান্ত উৎস এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। 

কালো জিরা  

কালো জিরা নাইজেলা নামেও পরিচিত। এর অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে এটি সুপারফুড হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ। কালো জিরা ক্যান্সার রোধী, এন্টি ইনফ্লামেটরি, এন্টি মাইক্রোবিয়াল গুণ সম্পন্ন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য ঐতিহ্যবাহী ওষুধ হিসাবে হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।  

সজনে বা মোরিঙ্গা  

মোরিঙ্গা গাছকে প্রায়শঃ 'যাদুর গাছ' বলে ডাকা হয়, এটি দ্রুত বাড়ে এবং খরা বা মরুতে অনায়াসে টিকে থাকতে পারে এই গাছ। দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে এই গাছের বিভিন্ন অংশ আয়ুর্বেদিক ওষুধ বানানোর কাজে ব্যবহার হয়। পাতা জাতীয় এই গাছের ফলন বছরে অন্তত সাত বার তোলা যায়। এতে ভিটামিন 'এ' ও 'সি' রয়েছে, এছাড়া ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়াম রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এখন স্যুপ বা কারি জাতীয় খাবারে ব্যবহার করা হয়। 

ডিম 

ডিমকে বলা হয় সুষম খাদ্য। সারা পৃথিবীতে মাত্র কয়েকটি খাদ্যকে সুপার ফুড হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ডিম অন্যতম। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় সুপার ফুড বলা হয় ডিমকে। এছাড়াও ডিমে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান। ডিমের সাদা অংশটুকু উচ্চ মানের জৈব আমিষ, আর কুসুমে স্নেহ পদার্থ, লৌহ ও ভিটামিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে। সব বয়সের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিম অত্যন্ত কার্যকর। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় গঠনে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর। কারণ ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। আবার কুসুমে আছে ভিটামিন ডি, যা হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো। 


বাদাম এবং বীজ
বাদাম এবং বীজ সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আখরোট, চিয়া বীজ এবং ফ্ল্যাক্সসিডে স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে হার্ট ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য   ভালো রাখে এগুলো। সালাদ এবং দইয়ের সাথে টপিংস হিসেবে বাদাম ও বীজ খেতে পারেন।   বীজ আমাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। এর সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রাও কমায়।     


গ্রিন টি 

গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি চমৎকার উৎস যা প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। একই সাথে এটি হজমে সহায়তা করে এবং ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। গ্রিন টি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। যাদের আর্থ্রাইটিস এর সমস্যা রয়েছে তাদের অনেক সময় গ্রীন টি সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।  


হলুদ 

হলুদ এমন একটি মসলা যা বহু শতাব্দী ধরে ঐতিহ্যগতভাবে ওষুধ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি কারকিউমিন সমৃদ্ধ, যার শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি ক্যান্সার এর মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।


আদা 

আদা হল আরেকটি মসলা যা বহু শতাব্দী ধরে এর ঔষধি গুণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি প্রদাহ কমাতে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজ করে।

রসুন 

রসুন একটি শক্তিশালী সুপারফুড যার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ইনফ্লামেশন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। একই সাথে   রক্তচাপ   এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।  


সুপার ফুড এর উপকারিতা 

সুপারফুড সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর। সুপার ফুড সমৃদ্ধ একটি খাদ্য গ্রহণ করা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধার সাথে যুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে

  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি  

  • স্মৃতিশক্তি বাড়ানো

  • প্রদাহ হ্রাস এবং ইমিউন ফাংশন উন্নত করা

  • হজমে সাহায্য করে এবং GI Tract এর রোগের ঝুঁকি কমায়

  • স্বাস্থ্যকর ত্বক, চুল এবং নখ গঠনে সাহায্য করে 


সীমাবদ্ধতা  

যদিও সুপারফুড গুলি অনেক সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে তবুও এদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতাসমুহ জানা খুবই জরুরি। সুপারফুডগুলো কোনো অলৌকিক রোগের নিরাময় নয়। এগুলো প্রাকৃতিক খাদ্য যাদের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।   এদের অবশ্যই   সুষম খাদ্যের   অংশ হিসাবে গ্রহণ করা উচিত।   শুধুমাত্র এই খাবারগুলির উপর নির্ভর করে সর্বোত্তম স্বাস্থ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ এরা সকল প্রকারের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে না। উপরন্তু, যে কোনো একটি সুপারফুডের অত্যধিক পরিমাণে খাওয়া পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। এই সমস্যা স্বাস্থ্যের উপর সম্ভাব্য প্রতিকূল প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সমস্ত সুপারফুড সকলের জন্য উপযুক্ত নয়, এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসা শর্তযুক্ত ব্যক্তিদের তাদের ডায়েটে যে কোনো নতুন খাবার অন্তর্ভুক্ত করার আগে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করে নেয়া উচিত।  


রেফারেন্স 

 


Leave a comment

Comments will be approved before showing up.

Subscribe
🐄 কোরবানির ঈদের দারুণ অফার!