আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের খুব সাধারণ একটি সমস্যা হচ্ছে জয়েন্টে ব্যথা। এটি নির্দিষ্ট একটি রোগ নয়। এটি এক বা একাধিক জয়েন্টকে আক্রান্ত করতে পারে। জয়েন্টের ব্যথা বলতে শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় (হাড়ের সংযোগস্থল) হওয়া ব্যথাকে বোঝায়। এটি হালকা থেকে তীব্র হতে পারে এবং স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদীও হতে পারে। সাধারণত এটি আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গাউট, ইনফেকশন বা আঘাতের কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত জয়েন্টের ব্যথা বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও এটি যে কোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি ৫ জনের ১ জনই জয়েন্টের ব্যথার শিকার।
জয়েন্টে ব্যথা নানান কারণে হতে পারে। হঠাৎ করে জয়েন্টে ব্যথা সামান্য পেশী বা লিগামেন্ট মচকে যাওয়া, অতিরিক্ত আঘাতজনিত আঘাত, সংক্রমণ (সেপটিক আর্থ্রাইটিস বা বাতজ্বর), অটোইমিউন রোগ (Sjogren's syndrome), ক্রনিক ডিজেনারেটিভ অবস্থা ( বাত ), বারসাইটিস বা স্থানচ্যুতির কারণেও হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান জয়েন্টে ব্যথা গুরুতর বা প্রাণঘাতী রোগের লক্ষণ হতে পারে। যেমন: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থারাইটিস, লিউকেমিয়া বা হাড়ের ক্যান্সার।
· জয়েন্টে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া
· জয়েন্ট নড়াচড়া করতে সমস্যা
· জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া
· লালচে ভাব বা গরম অনুভব
· জয়েন্ট নড়াচড়ায় অক্ষমতা
· তীব্র ব্যথা
· শারীরিক দুর্বলতা
জয়েন্টের ব্যথার ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসা গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি ব্যথার তীব্রতা বাড়ানো, স্থায়ী ক্ষতি বা কার্যক্ষমতা হারানোর কারণ হতে পারে। জয়েন্টের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। অনেকেই এই ব্যথা দূর করতে নানা ধরনের ঘরোয়া উপায় বা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করেন। কিন্তু অনেক সময় এই পদ্ধতিগুলো আরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আসুন জেনে নিই জয়েন্টের ব্যথায় কিছু প্রচলিত ভুল চিকিৎসা সম্পর্কে।
জয়েন্টের ব্যথা যে কোনো বয়সে হতে পারে। আঘাত, অটোইমিউন ডিজঅর্ডার বা সংক্রমণের কারণে শিশু এবং তরুণদের মধ্যেও এটি দেখা যায়।
আর্থ্রাইটিস ছাড়াও অন্যান্য কারণ যেমন গাউট, আঘাত, অতিরিক্ত ওজন বা সংক্রমণের ফলে জয়েন্টের ব্যথা হতে পারে।
অতিরিক্ত বিশ্রাম কখনো কখনো জয়েন্ট আরও শক্ত করে দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপি অনেক ক্ষেত্রে উপকারী।
গরম সেঁক আরাম দিতে পারে। তবে ব্যথা যদি আঘাত বা ফোলার কারণে হয়, তবে ঠান্ডা সেঁক অধিক কার্যকর।
ব্যথানাশক সাময়িক আরাম দেয়, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য মূল কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
৬. জয়েন্টের ব্যথা সারাতে ঘরোয়া প্রতিকারই যথেষ্ট
কিছু ক্ষেত্রে ঘরোয়া প্রতিকার সহায়ক হলেও গুরুতর ব্যথার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অতিরিক্ত ওজনের কারণে জয়েন্টে বাড়তি চাপ পড়ে, বিশেষত হাঁটু ও কোমরে। ফলে ব্যথা হতে পারে।
অনেক ধরনের জয়েন্টের ব্যথা চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেমন, গাউট বা সংক্রমণজনিত ব্যথা।
জয়েন্টের ব্যথা হাড়ের সমস্যা ছাড়াও জয়েন্টের কার্টিলেজ, লিগামেন্ট বা মাংসপেশীর সমস্যার কারণেও হতে পারে।
আর জয়েন্টের ব্যথা কমাতে জয়েন্ট গার্ডের ওষুধ খেতে পারেন। এক্ষেত্রে কারকুমা জয়েন্ট গার্ড খুবই কার্যকরী। কারণ এতে আছে মিথাইল সালফোনাইল মিথেন, যা হাড়কে মজবুত করতে এবং জয়েন্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
জয়েন্টের ব্যথাকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জয়েন্টে ব্যথা প্রায় সময়ই অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ফলে হয়ে থাকে। এটি যেমন বয়স্কদের হতে পারে ঠিক তেমনি অল্প বয়সেও জয়েন্টের ব্যথা দেখা দিতে পারে। জয়েন্ট সুস্থ রাখতে সবার প্রথমে ওজন ঠিক রাখতে হবে। বিএমআই ২০ থেকে ২৫–এর ভেতর থাকতে হবে। এর কমবেশি কোনোটাই ভালো নয়। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। জয়েন্টের মাসল শক্তিশালী রাখতে কিছু ব্যায়াম আছে, সেগুলো করতে হবে। ক্যালসিয়াম, মিনারেল ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন: ছোটো মাছ, কচুশাক, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে। ভাত কম খেতে হবে। আর এভাবে চললে জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
· 2. https://oaaction.unc.edu/2019/05/myths-about-osteoarthritis/
· 3. https://www.sepapain.com/blog/6-myths-about-joint-pain-and-arthritis
· 4. https://www.bbc.com/bengali/news-63743607
· 5. https://m.priyo.com/i/201810081513-five-myths-about-broken-bones
Comments will be approved before showing up.