পেটের যত্নে অর্গানিক ফাংশনাল ফুড
অনেক সময় শারীরিক সমস্যার কারণে খাদ্যনালীর স্ফিঙ্কটার (sphincter) প্রসারিত হয়ে গেলে হজমে সহায়তার জন্য পাকস্থলিতে যে এসিড নিঃসৃত হয়, তা খাদ্যনালী বরাবর উপরের দিকে উঠে আসতে থাকে ফলে খাদ্যনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং অস্বস্তি বা বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে । এই অবস্থা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) হিসেবে পরিচিত ।
________
পেটের শ্লেষ্মা (মিউকাস) একটি সুরক্ষামূলক পদার্থ যা পেটের অভ্যন্তরীণ দেয়ালকে রক্ষা করে। এই মিউকাস স্তর দুর্বল হয়ে গেলে পেটের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারকিউমিন এই মিউকাস নিঃসরণ বাড়াতে, পেটের ক্ষতিকর এনজাইম যেগুলো পেটের কোষ বা টিস্যুর ক্ষতি করতে পারে এমন এনজাইমের কার্যক্রম দমন করতে সহায়তা করে এবং পেটের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে ।
আমাদের পেটে নানা ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া, আর্কিয়া (Archaea), ছত্রাক এবং ভাইরাস রয়েছে, যা গাট মাইক্রোবায়োটা বা গাট ফ্লোরা নামে পরিচিত । গাট মাইক্রোবায়োটার ভারসাম্যহীনতার ফলে কোলনে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন তৈরী হয় যা আই বি এস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম হিসেবে পরিচিত । আই বি এস বিভিন্ন উপসর্গসমূহ হল, পেট ব্যথা, ফাঁপা ভাব (ব্লোটিং) এবং মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, যেমন ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বা উভয়ের সংমিশ্রণ। আই বি এস পেটের স্থায়ী কোনো ক্ষতি করে না, তবে এটি একজন ব্যক্তির জীবনযাত্রার মানে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। কারকিউমিন আইবিএস এর প্রদাহ, পেট ফাঁপা, গ্যাস, ব্লোটিং এবং পেটের অস্বস্তি কমাতে সহায়তা করে।
গাট ইকোসিস্টেম বা গাট ইকোলজি পেটের মাইক্রোবায়োটার ভারসাম্য বোঝায়। ব্যালেন্সড গাট ইকোলজি হজমে সাহায্য করে, পুষ্টি যোগায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের সাথে পেটের সুসম্পর্ক বজায় রাখে । কারকুমা হেলদি গাট পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়া যেমন বিফিডোব্যাকটেরিয়াম ও ল্যাকটোব্যাসিলাসের বংশ বৃদ্ধিতে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে আমাদের গাট ইকোলজি ব্যালেন্স করতে সহায়তা করে ।
আমাদের শরীরের সকল কার্যক্রমের জন্য সর্বদা রাসায়নিক বিক্রিয়া চলমান থাকে । পরিবেশ দূষন ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ফলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক রাসায়নিক বিক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং প্রচুর পরিমান ফ্রি রেডিকেল তৈরী হয় । অনিয়ন্ত্রিত ফ্রি রেডিকেল অন্যান্য ভালো কোষের উপর চাপ সৃষ্টি ফলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরী হয় এবং কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় । ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাটি লাল হয়ে ফুলে যায় বা প্রদাহ (ইনফ্লামেশন) তৈরী হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। কারকুমা অর্গানিক হেলথি গাটে থাকা কারকিউমিন ও মালবেরি এক্সট্রাক্ট শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি অতিরিক্ত ফ্রি রেডিকেল শোষণ করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং প্রদাহ (ইনফ্লামেশন) কমাতে সহায়তা করে।
হলুদের সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন, একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট । ফ্রি রেডিকেল এর কারণে আমাদের শরীরে যেই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরী হয় তা এমডিএ (ম্যালনডিআলডিহাইড) টেস্টের মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় । এটি একটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সূচক । শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বেড়ে গেলে এম ডি এ লেভেল ও বেড়ে যায় । কারকিউমিন ফ্রি র্যাডিকেল নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে এমডিএ-এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখাসহ দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি কমায় ।
জিনজার বা আদার এসেনশিয়াল অয়েলকে বলা হয় ”দ্যা অয়েল অফ এমপাওয়ারমেন্ট” যা প্রাচীনকাল থেকেই দেহের প্রদাহ, আর্থ্রাইটিস, জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি শ্বেত রক্তকণিকার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । গবেষণায় দেখা গেছে, জিনজার এসেনশিয়াল অয়েল ক্রনিক ইনফ্লামেশন কমাতে এবং অটোইমিউন ডিসঅর্ডার প্রতিরোধে সহায়তা করে ।
মালবেরী গাছের ফলকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করে মালবেরী এক্সট্রাক্ট তৈরী করা হয়। মালবেরী এক্সট্রাক্ট পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে পেটের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটির ল্যাক্সেটিভ প্রোপার্টির কারণে এটি মলকে নরম করে এবং নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্যে উপকারী ভূমিকা পালন করে।
গোল মরিচের (ব্ল্যাক পেপার) এর ফল থেকে ব্ল্যাক পেপার এক্সট্রাক্ট তৈরী করা হয়। এত বিদ্যমান পিপারিন (Piperine) নামক অ্যালকালয়েড রক্তে কারকিউমিনের শোষনক্ষমতা ২০০০ গুণ পর্যন্ত বাড়াতে পারে বলে একাধিক গবেষনায় পাওয়া গেছে । কারকুমা হেলদি গাটে কারকিউমিনের সাধে সঠিক পরিমানে ব্ল্যাক পেপার এক্সট্রাক্ট বিদ্যমান থাকায় এটি অমাদের শরীরে অধিক কার্যকরী হয়।