'ডেঙ্গু জ্বর' এডিস মশার কামড়ে ছড়ানো এই রোগটির সঙ্গে আমরা অনেক আগে থেকেই পরিচিত, তবে বর্তমানে এর ভয়ানক দানবীয় রূপটা যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে এসেছে, যদিও গতবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। এই বছরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিদিন ১০০০+ নতুন রোগী আক্রান্ত হচ্ছে এবং ২/৪ জন মারাও যাচ্ছে।
বর্ষাকাল চলে এসেছে, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টবর সময়টা ডেঙ্গুর জন্য অনেকটা ঝুঁকিপূর্র্ণ। এই বছরেও নিশ্চয় আপনার আসে পাশের অনেকের ডেঙ্গু জ্বরের খবর শুনতে পাচ্ছেন। আপনারও কি জ্বর ও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথাঅনুভব করছেন, কিন্তু স্বাভাবিক নাকি ডেঙ্গু তা নিশ্চিত হতে পারছেন না? আসুন ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো এবং এই রোগের প্রতিকার করবেন কিভাবে তা জেনে নিই।
এই রোগটি যদি সময়মত চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দ্রুত ডেঙ্গু সনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা খুবই জরুরি। অন্যথায় এ ধরনের অবহেলা তাদের জীবনের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত করতে হলে আপনাকে প্রথমে এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। আসুন ১০ টি কমন লক্ষণ জেনে নিই, যাতে খুব সহজেই বুঝতে পারেন, আসলে আপনার কি সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গু।
ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রধান লক্ষণ হল হঠাৎ করে তীব্র জ্বরের উৎপত্তি। এটি প্রায়ই ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে, যা ৩-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে, এডিস মশা কামড় দেয়ার পর ৪-১০ দিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে। তীব্র জ্বর রোগীর শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটাতে পারে এবং অন্যন্য লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে পারে ( 1 )।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে জ্বরের পাশাপাশি বমি বমি ভাব ও বমি একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি খাদ্য গ্রহণ এবং পানি পানের প্রতি অনীহা সৃষ্টি করে যা শরীরের পানির অভাব ঘটায়। পরবর্তীতে পানির অভাব ডেঙ্গু রোগীর অবস্থা আরও জটিল করতে পারে ( 2 )।
এর পরে যে লক্ষণটি দেখে বুঝবেন আপনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, তা হলো পেশি, হাড় ও জয়েন্টে তীব্র ব্যথা। শরীরের বিভিন্ন জায়গায়, যেমন পায়ে, গিঁটে, বা হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে এটি "ব্রেকবোন ফিভার" নামে পরিচিত। Times of India এর একটি জরিপ থেকে জানা যায়, ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হওয়ার পর, ২০% থেকে ৫০% রোগী শরীরের বিভিন্ন হাড় এবং জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করেন ( 3 )।
ডেঙ্গু জ্বরের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হল তীব্র মাথাব্যথা। মাথার সামনের অংশে ব্যথা বিশেষভাবে তীব্র হয়, যা ঘাড় ও চোখের চারপাশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, রোগীকে দুর্বল করে তোলে ( 4 )।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা যায়। এই ফুসকুড়ি সাধারণত ডেঙ্গুর দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম দিনে দেখা দিতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে ( 5 )।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণে কিছু রোগীর ডায়রিয়া হতে দেখা যায়। ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ হারিয়ে যায়, যা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে এবং রোগীকে আরও দুর্বল করে তোলে ( 6 )।
ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের প্রায়ই চোখের পেছনে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এটি চোখ নাড়ানোর সময় আরও তীব্র হয় এবং কিছু রোগীর জন্য অসহনীয় হতে পারে, যা অন্য লক্ষণগুলির সাথে মিশে রোগীকে আতঙ্কিত করতে পারে ( 7 )।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর আরেকটা বড়ো লক্ষণ হলো তীব্র শারীরিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করা। এই দুর্বলতা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং রোগীর স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া কঠিন করে তোলে ( 8 )।
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ২ থেকে ৭ দিনের মতো স্থায়ী হয়, এর পর সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু এই জ্বর যদি ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বরে বা হেমোরেজিক ফিভারে রূপান্তরিত হলে রোগীর নাক, মুখ, দাঁতের মাড়ি, এমনকি ত্বক থেকেও রক্তপাতের ঝুঁকি তৈরি হয়। এমনকি বমি বা মল ত্যাগের সময়ও রক্তপাত হতে পারে এই রক্তক্ষরী ডেঙ্গুর কারণে ( 9 )।
ডেঙ্গু জ্বরে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, বিশেষ করে ফুসফুসে পানি জমলে। এটি একটি জটিল লক্ষণ এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যা রোগীর জীবনকে বিপন্ন করতে পারে ( 10 )। যদি আপনি গলায় ব্যথা, গলার পাশে ফোলা, শাঁস নিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ না করেন, এটা আপনার জন্য বিপদজনক (ডেঙ্গু পজিটিভ) হতে পারে।
উপরে যে ১০ টি লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেছি, এগুলো ছাড়াও গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া, হঠাৎ খুব বেশি ঠান্ডা বা গরম অনুভব করা, ইত্যাদি হতে পারে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ( 11 )। তাই আপনি যদি আপনার অথবা আপনার বাচ্চার শরীরে এসব লক্ষণ দেখতে পান তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
World Health Organization (WHO) এর তথ্যমতে, ডেঙ্গু রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই ( 12 )। তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিকার গ্রহণ করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকারে এই করণীয় গুলো ( 13 ) ছাড়াও আরও কিছু বর্জনীয় বিষয়াদি আছে মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন দেখে নেই, ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারে কি কি করা যাবে না।
উপরে আলোচিত করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারে সহায়তা করতে পারে। সেই সাথে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বেবস্থা নিলে, আশা করা যায় অতি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।
এই ব্লগ এর শেষে একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চায়, ডেঙ্গু জ্বর আমাদের অনেক পরিচিত হলেও এর ভয়াবহতাও কম নয়। এই জ্বরের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই বিশেষ করে আপনার প্রানপ্রিয় সন্তান (ছোট বাচ্চা) এবং বয়স্ক বাবা-মার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে।
তাই তীব্র জ্বর, বমি বমি ভাব, তীব্র মাথা ব্যথা, ডায়রিয়া, ত্বকে র্যাশ ও রক্তপাতের মতো ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো দেখতে পেলে, দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে রোগীর অবস্থা দ্রুত উন্নতি হতে পারে।
এছাড়াও আপনার নিজেকে এবং পরিবারকে সুস্থ রাখতে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা জরুরি। মশারি ব্যবহার, মশা প্রতিরোধক স্প্রে, এবং বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানির উৎস ধ্বংস করার মাধ্যমে এই মশার উপদ্রব কমানো সম্ভব। রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা এবং সতর্ক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়, তবে ব্যক্তিভেদে এর সময়কাল ভিন্ন হতে পারে। জ্বর কমে গেলেও অন্যান্য ডেঙ্গু রোগের অন্যন্য লক্ষণ যেমন দুর্বলতা, শরীর ব্যথা আরো কিছুদিন থাকতে পারে।
হ্যাঁ, ডেঙ্গু জ্বর হলে ঠান্ডা পানি দিয়েই গোসল করা যাবে। গরম পানি দিয়ে গোসল করা উচিত নয়, কারণ গরম পানি শরীরের পানি শোষণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে, জ্বরে যদি অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগে তাহলে হালকা কুসুম পানি দিয়ে গোসল করার পর, অতি দ্রুত শরীর ও চুলের পানি শুকিয়ে ফেলতে হবে।
হ্যাঁ, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অনেক রোগীর পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া) হতে পারে। এটি ডেঙ্গু জ্বরের একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল ও লবণ হারানোর কারণ হতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু জ্বরের পর দুর্বলতা দূর করতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন। সহজে হজম হয় এমন খাবার, যেমন স্যুপ, ডাবের পানি, ফলমূল, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়াও ডাক্তারের সাথে কথা বলে Organic Nutrition এর Karkuma Immune Plus অর্গানিক ফুড টি খেতে পারেন। কারণ এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করবে।
Comments will be approved before showing up.