আপনি কি হাঁটু ব্যথায় ভুগছেন? হাঁটু ব্যথা কেন হয় জানতে চাচ্ছেন? হাঁটু ব্যথার উপসর্গ কি কি এবং এ ব্যথা থেকে স্থায়ী মুক্তির উপায় খুঁজছেন?
হাঁটু মানবদেহের ওজন বহন করার জন্য প্রধান একটি অস্থিসন্ধি বা জয়েন্ট। আমাদের দেশে সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা বেশি লক্ষ্য করা যায়। যদিও ছোট-বড় সকলের মধ্যেই এ সমস্যা দেখা যেতে পারে। আচ্ছা, তাহলে হাঁটু ব্যথার সমধানগুলো কি কি?
টেনশন নেই! এই ব্লগে আমরা শুধু মাত্র হাঁটু ব্যথার কারনই না, উপসর্গ, কার্যকারী চিকিৎসা পদ্ধতি সবই অলোচনা করবো। আর অপেক্ষা কিসের? চলুন তাহলে, শুরু করা যাক!
দি ওয়াশিংটন পোস্ট এর সূত্রমতে “প্রতি ৪ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১ জন হাঁটু ব্যথায় ভুগেন”। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি কমবয়সীরাও এর ভুক্তভোগী হতে পারেন। চলুন জেনে নেই হাঁটু ব্যথার কতগুলো কারনঃ
হাঁটুসন্ধি বা জয়েন্টে ব্যথার জন্য যেসব আর্থ্রাইটিস দায়ী তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অস্টিওআর্থ্রাইটিস। অস্টিওআর্থ্রাইটিস এ অস্থিসন্ধির তরুণাস্থি ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। হাঁটুতে বারবার ব্যথা পেলে বা শারীরিক স্থূলতার কারনে অস্থিসন্ধিতে এ অবস্থা হতে পারে। বৃদ্ধ ও মধ্যবয়স্কদের অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
অপরদিকে, হাঁটুর ব্যথার জন্য দায়ী আরেকটি আর্থ্রাইটিস টাইপ হচ্ছে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস। এতে ভুক্তভোগীদের হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে প্রদাহের সাথে তরুণাস্থির ক্ষয় হতে থাকে। সাধারণত কৈশোর ও সদ্য যৌবন এ থাকা ছেলেমেয়েদের রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর ঝুঁকি বেশি থাকে অস্টিওআর্থ্রাইটিস এর তুলনায়।
হাঁটুতে ট্রমা বা আঘাত বিভিন্ন কারনে হতে পারে। হাঁটুর সামনে থাকা একটি অস্থি “প্যাটেলা” এর আশেপাশে অবস্থিত টেন্ডন বা রগে আঘাত পেলে, ফ্রাকচার, সংযোগকারী তরুণাস্থির ক্ষয়, কালশিরা ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে হাঁটুসন্ধিতে ব্যথা, প্রদাহ এবং ফুলে যেতে পারে।
মেডিকেলীয় ভাষায় রগ বা টেন্ডনে প্রদাহ হলে তাকে টেন্ডোনাইটিস বলে। এই প্রদাহ যখন প্যাটেলা বা কোয়াড্রিসেপসে হয়ে থাকে তখন একে “জাম্পার্স নী” ও বলা হয়। জাম্পার্স নীর সমস্যা হতে পারে যারা লাফ দেয়ার সাথে সম্পর্কিত ক্রীড়ায় জড়িত থাকেন। যেমন - সাইক্লিস্ট, দৌড়বিদ, স্কি খেলোয়াড় ইত্যাদি। এ অবস্থার ভুক্তভোগীদের প্যাটেলা ( নীক্যাপ) ও টিবিয়ার (শিনবোন) মধ্যবর্তী অংশে ব্যাথা অনুভূত হয়।
এসিএল ( ACL - Anterior Cruciate Ligament ) হচ্ছে চারটি লিগামেন্টের মধ্যে একটি যা আপনার উরুর হাড়কে আপনার শিনবোনের সঙ্গে যুক্ত করে। এর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে হাটাচলায় সমস্যা, পায়ে তীব্র ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। দ্রুত দিক পরিবর্তন যেসকল খেলার মধ্যে প্রয়োজন, যেমন বাস্কেটবল, ফুটবল খেলোয়াড়রা প্রায়শই এসিএল ইনজুরিতে ভুগেন।
হাঁটুর হাড় বা হাঁটুর ক্যাপে আঘাত পাবার কারনে হাঁটুর হাড় ভেঙ্গে গিয়ে প্রচন্ড হাঁটু ব্যথার কারন হতে পারে।
মেনিস্কাস উরুর হাড় এবং শিনবোনের মধ্যে একটি শক শোষক হিসাবে কাজ করে। এটা রাবারি এবং শক্ত তরুণাস্থি নিয়ে গঠিত। ওজন বহন করার সময় যদি অপ্রত্যাশিতভাবে হাঁটু মুচড়ে যায় সে ক্ষেত্রে মেনিস্কাস ছিঁড়ে যেতে পারে।
অনেক সময় কোন হাড় বা তরুণাস্থির ক্ষয় বা আঘাতের কারণে এর একটি ছোট অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে জয়েন্ট স্পেসে ঘোরাফেরা করতে পারে। এটা হাঁটু ব্যথার কারণ হতে পারে।
পেলভিসের বাইরে থেকে হাঁটুর বাইরে পর্যন্ত প্রসারিত টিস্যুর শক্ত ব্যান্ড হচ্ছে ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ড। দৌড়বিদ এবং সাইক্লিস্টরা এর অত্যন্ত ব্যবহারের জন্য ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ড সিন্ড্রোম ঝুঁকিতে থাকেন। এ কন্ডিশনে ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ড খুবই শক্ত হয়ে ফিমার নামক অস্থির গায়ে লেগে ক্রমাগত ঘষা খেতে থাকে ও ভুক্তভোগীরা ব্যথা অনুভব করেন।
দীর্ঘস্থায়ী জ্বালাপোড়া/ইরিটেশনের জন্য প্যাটেলার চারপাশে অবস্থিত টিস্যু ইলাস্টিসিটি হারায়। তখন এটা ফাইব্রোটিক ব্যান্ড এর মতো হয়ে গিয়ে হাঁটুব্যথার কারন হতে পারে।
হাঁটুর সামনে থলির মতো অংশটিকে প্রিপ্যাটেলার বার্সা বলা হয়। এই অংশের কাজ হচ্ছে অস্থি, পেশি, রগ, লিগামেন্টের সাথে ঘর্ষন উপেক্ষা করা। দীর্ঘসময় হাঁটু গেড়ে বসে কাজ করলে বা হাঁটুতে প্রতিনিয়ত আঘাত পেতে থাকলে প্রিপ্যাটেলার বার্সায় প্রদাহ তৈরি হয়।
এই কন্ডিশনকে হাউজমেইড’স নী নামেও বলা হয়। প্রিপ্যাটেলার বার্সাইটিস এর লক্ষণগুলো হচ্ছে হাঁটুতে ব্যথা, সামনের অংশ ফুলে যাওয়া, হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে জড়তা ইত্যাদি।
হাঁটু ব্যথার আরেকটি কারন এটা। আঘাতের ফলে হাঁটুর সামনের অংশে থাকা ইনফ্রাপ্যাটেলার ফ্যাট প্যাডে ক্রমাগত ঘর্ষণের ফলে এই অবস্থা তৈরি হয়।
আমাদের শরীরে মাংশপেশি এবং রগের সংযোগস্থলে কিছু তরুণাস্থি থাকে যাদের এপোফাইসেস বলে। এমন অনেকগুলো এপোফাইসেস কোমরে এবং হাঁটুতে রয়েছে। শৈশব এবং কৈশোরের ছেলেমেয়েদের অস্থির গ্রোথপ্লেটের এর আশেপাশে আঘাতে এপোফাইসাইটিস হয়।
এপোফাইসাইটিসের দুইটি ধরন হচ্ছে “অজগুড স্লাট্যার ডিজিজ” ও “সিন্ডিং লারসেন জোহানসন সিনড্রোম”। দৌড়ানো, লাফ দেওয়া ইত্যাদি খেলাধুলার সাথে জড়িত তরুন খেলোয়াড়দের এপোফাইসাইটিস এর ঝুঁকি থাকে। এই রোগের কিছু প্রচলিত লক্ষণ হচ্ছে খেলার চলাকালীন বা পরবর্তী সময়ে হাঁটু ব্যথা অসহনীয় অবস্থায় চলে যাওয়া, হাঁটুর আশেপাশে ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। যদিও এপোফাইসাইটিসের লক্ষণ ও উপসর্গের ভিন্নতা থাকতে পারে।
হাঁটুর সামনের দিকের ত্রিভুজাকার হাড়টি তার জায়গা থেকে স্থানচ্যুত হলে এই অবস্থার তৈরি হয়। গাড়ি দুর্ঘটনা, স্পোর্টস ইনজুরি ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে এই বেদনাদায়ক অবস্থা তৈরি হতে পারে।
হাঁটু মানব শরীরের সবচেয়ে বড় জয়েন্ট যেখানে হাড়, লিগামেন্ট, কার্টিলেজ এবং টেন্ডন রয়েছে। এক্ষেত্রে হাঁটু ব্যাথার কারন নির্ভর করে কোন গঠন জড়িত তার উপর। ব্যথার তীব্রতায় ও ভিন্নতা হতে পারে, সামান্য অস্বস্তি থেকে ব্যথা অক্ষম করা পর্যন্ত।
হাঁটু ব্যথা একটি সাধারন পেশীবহুল অবস্থা, বর্তমানে অনেক মানুষই এই সমস্যায় ভুগছেন। জীবন ব্যবস্থা এবং খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই এই সমস্যা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।
যুগ যুগ ধরে শরীরের বিভিন্ন রোগব্যাধী প্রতিরোধ, প্রশমন এবং নিয়ন্ত্রনে খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
হাঁটুর ক্ষয়রোধে একটি পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের জুরি নেই। যেসব খাবারে প্রচুর পরিমান এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যেমন ভিটামিন এ, সি, ই সমৃদ্ধ খাবার হাঁটুর ক্ষয়রোধ করে। হাঁড়ের ক্ষয় রোধে খুবই উপকারী কয়েকটি খাবার হচ্ছে পালংশাক, বাদাম, ব্রকলি, গ্রিন-টি ইত্যাদি খাবার ।
তেলসমৃদ্ধ মাছে পাওয়া যায় স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ যা এন্টি ইনফ্লামেটরি সমৃদ্ধ। এটা হাঁড়ক্ষয় রোধে খুবই উপকারী। অলিভ অয়েল, এভোকোডা তেল শরীরের কোলেস্টোরল কমাতে ভুমিকা রাখে। ডিম, দুধ, মাখন, দই, ছোট মাছ ইত্যাদিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি যা হাঁড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে।
বর্তমানে আমেরিকা, ইউরোপ, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফাংশনাল ফুডের চাহিদা রেড়ে চলছে, যা মানবদেহের পুষ্টির চাহিদার উর্ধে গিয়ে বিভিন্ন শরিরীক সমস্যার প্রশমনে সহায়তা করে।
কারকুমা জয়েন্ট গার্ড একটি ফাংশনাল ফুড প্রডাক্ট, যা অস্থি-সন্ধির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে। এর প্রধান উপাদান সমূহ ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (USDA) অর্গানিক সার্টিফাইড, যা সংগৃহীত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য উৎস হতে।
এই পণ্যে বিদ্যমান উপাদানসমূহ হল, অর্গানিক কারকিউমিনস, অর্গানিক টারমারিক পাউডার, অর্গানিক সিনামন অয়েল, অর্গানিক ব্ল্যাক পেপার নির্যাস, অর্গানিক জিঞ্জার অয়েল, মিথাইল সালফোনিল মিথেন (ফুড গ্রেড), গুকোসামিন সারফেট (ফুড গ্রেড) এবং কনড্রয়টিন সালফেট (ফুড গ্রেড)।
কারকিউমিন, টারমারিকের এমন একটি কার্যকরী উপাদান যা অস্থি-সন্ধির কার্টিলেজ ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। গ্লুকোসামিন সারফেট অস্থি- সন্ধির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। মিথাইল সালফোনিল মিথেন অস্থি-সন্ধির রেঞ্জ অব মোশন এবং ফিজিক্যাল ফাংশন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে , এবং কনড্রয়টিন সালফেট অস্থি-সন্ধির ম্যাট্রিক্সেও সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
হাঁটু ব্যথা চিকিৎসার একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে ব্যথা উপশমকারী ওষুধের ব্যবহার। এক্ষেত্রে হাঁটু ব্যথার জন্য কোন ওষুধ শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করুন। ডাক্তার আপনার বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন করে আপনাকে ওষুধ দিবেন।
ফিজিওথেরাপি হাঁটু ব্যথার চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী একটি চিকিৎসা। হাঁটু ব্যথা নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য একটি থেরাপি হচ্ছে শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি। আরও কয়েকটি ম্যানুয়াল থেরাপি, যেমন স্ট্রেচিং, জয়েন্ট মবিলাইজেশন, ম্যানিপুলেশন, টেপিং ইত্যাদি ও কাজ করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের হিট কম্প্রেশনও হাঁটু ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে।
অনেক সময় ব্যথা নিবৃত্তির জন্য সরাসরি হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত দুইটি ইনজেকশন হল লুব্রিকেন্ট এবং কর্টিকোস্টেরয়েড।
যখন আর কোন চিকিৎসা পদ্ধতিই কাজ করে না তখন হাঁটু অস্ত্রোপচার বা সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। ব্যথার তীব্রতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসকগণ আর্থ্রোস্কোপিক হাঁটু সার্জারি বা হাঁটু প্রতিস্থাপন করে থাকেন। রক্তনালী বা কোনো স্নায়ু মেরামতের জন্য বা ক্ষতিগ্রস্ত লিগামেন্ট প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে।
আর্থ্রোস্কোপিক হাঁটু সার্জারিতে ডাক্তার হাঁটুর ভিতরে ছোট গর্ত করে ফাইবার-অপটিক ক্যামেরা ঢুকিয়ে পরীক্ষা করেন। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর হাঁটুর ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণ প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে। কন্ডিশন অনুযায়ী ধাতব এবং প্লাস্টিকের অংশগুলি দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হতে পারে।
তাহলে আমরা জানলাম, হাঁটু ব্যথা কেন হয়? এর উপসর্গগুলো কি কি এবং চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো কি কি? আশা করছি, আপনার হাঁটু ব্যথার সমস্যা সমাধানে এই তথ্যগুলো ভূমিকা রাখবে।
হাঁটু ব্যথা থেকে নিরাময় সম্ভব। তবে ওজন কমানো এবং দৈনন্দিন জীবনধারা পরিবর্তন না করলে এর থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া কঠিন। নিয়মিত ব্যয়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এর মাধ্যমে কমবে হাঁটুর ব্যথা এবং হাঁটুর ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে।
রেফারেন্সঃ
:৩ঃ
https://tv9bangla.com/health/reason-of-knee-pain-among-old-people-au56-772759.html
৪ঃ
ইন্ডিয়া থেকে কিভাবে কিনবো???
Nice
Comments will be approved before showing up.
aspc
July 15, 2024
Thank you I have just been searching for information approximately this topic for a while and yours is the best I have found out so far However what in regards to the bottom line Are you certain concerning the supply