বছর পেরিয়ে আবার এলো পবিত্র মাহে রমজান। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এ মাসে যথাসম্ভব ইবাদত বন্দেগি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই প্রত্যেকের কাম্য। রোজার উদ্দেশ্য হল প্রার্থনা, আধ্যাত্মিকতা ও আত্মিক উন্নতি সাধনের দিকে মনোযোগ দেয়া এবং এই মাসের পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ রাখা। বেশি বেশি ইবাদত করার জন্য চাই সুস্থ দেহ আর সুস্থ দেহ পাবার অন্যতম শর্ত হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ।
আপনি যদি ৩০ দিন রোজা রেখে সুস্থ থাকার পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য ও আপনার ফিটনেস অক্ষুণ্ণ রাখতে চান, তাহলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জেনে রাখুন।
১. পর্যাপ্ত পানি পান
সুস্থ থাকার জন্য শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখা খুবই জরুরি। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সম্ভব হলে সন্ধ্যায় রোজা ভাঙার পর থেকে হাতে একটি পানির বোতল রাখুন। এবং কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করুন। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা উচিত। আর রমজানের মধ্যে ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত সময়টাতে বেশি করে পানি পান করা প্রয়োজন। হাতের কাছে সবসময় একটা বোতল রাখলে পানি পান করার কথা মনে পড়বে বারবার।
২. অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া
নিঃসন্দেহে পুরো দিন রোজা রাখার পর ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা জাগবে, কিন্তু ইফতারে বেশি খাওয়ার ফলে ক্লান্তি, পেটে ব্যথা এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, বেশি ক্যালোরি ও জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকার জন্য রমজান জুড়ে আপনার খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন পর্যাপ্ত পরিমাণ দুগ্ধ ও প্রোটিন। এছাড়াও, হজম হতে বেশি সময় লাগে এমন খাবার খাওয়া ক্ষুধা রোধ করার একটি সহজ উপায়।
৩. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
রমজানে ইফতারের সময় অনেকেরই ভাজা-পোড়া ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। কিন্তু এসব খাবারে থাকে উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম। যা শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। সুতরাং এসব খাবার এড়িয়ে বরং ফল-মূল ও পেট ঠাণ্ডা রাখবে এমন খাবার খেতে হবে। আর সেহেরির সময় কয়েকটি খেজুর খেয়ে নিন। এতে দিনে না খেয়ে থাকার ফলে মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানোর মতো যে সমস্যা দেখা দেয় তা এড়ানো যাবে।
৪. দুপুরের পর একটু ঘুমানো
রোজার সময় প্রতিদিন দুপুরের পরে একটু ঘুমিয়ে নিন। তাহলে আর রোজার ক্লান্তিতে আপনার শরীর ভেঙে পড়বে না। জোহরের নামাজের পর থেকে আছরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়টি দিবানিদ্রার সবচেয়ে ভালো সময়।
৫. চিনিতে দরকার রেশনিং
রমজান মাসে রোজার সময়ে স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে মিষ্টিজাতীয় জিনিস খাওয়া কম করার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা। ফলাহারের পরিমাণ বাড়ালে মিলবে উপকার। পাতে আপেল, কলা, পেঁপে, তরমুজের মতো ফল থাকলে সমস্যা কম হবে।
৬. লবণের পরিমাণ কমানো
লবণ ছাড়া খাবার খাওয়া অসম্ভব। কিন্তু লবণের পরিমাণ বেশি হলেই সমস্যা। তাতে কিডনি থেকে হার্ট সবেরই বিপদ বাড়ে। রক্তচাপ বাড়ার কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
৭. সেহেরি বাদ না দেয়া
রমজান মাসে শেষ রাতের খাবার তথা সেহেরি হলো দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। যা আমাদের নিয়মিত রুটিনে সকালের নাস্তার মতোই। তাই সারা দিন রোজা রাখার শক্তি পাওয়ার জন্য সেহেরিতে সুষম খাবার খাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
৮. মৌসুমি ফলমূল
রমজানে সুস্থ-স্বাভাবিক শরীরের জন্য খাদ্য তালিকায় রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌসুমি ফলমূল। বেশি বেশি করে ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। দেশি মৌসুমী নানা ফল একদিকে যেমন শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে, অন্যদিকে এসব ফলের অনেক পুষ্টিগুণও রয়েছে।
৯. সীমিত চা-কফি
পারতপক্ষে রমজানে চা-কফি পান না করাই উত্তম। তবে খুব বেশি খেতে ইচ্ছে করলে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। কারণ বেশি খেলে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। চা-কফির স্থলে বিভিন্ন ধরনের ঠাণ্ডা পানীয় পান করুন।
১০. নিয়মিত ব্যায়াম
আপনার শরীরকে কাজে ব্যস্ত রাখুন। প্রতিদিনের ঘরের কাজ করুন বা অফিসে যান, হাঁটা বা হালকা ব্যায়ামের মতো কাজগুলো শরীর সুস্থ রাখে। রোজায় বাড়তি মেদ ঝরাবার সুযোগ পাওয়া যায়, ইতিবাচক এই সুযোগটাকে কাজে লাগান। শরীর ফিট রাখতে এক্সারসাইজ বন্ধ করলে চলবে না। ব্যায়ামরত অবস্থায় মাথা ব্যথা করে, অথবা দুর্বল অনুভব করতে থাকেন, তবে সাথে সাথে ব্যায়াম থেকে সেদিনের জন্য বিরতি নিন। তারাবির সালাত আদায় করুন। ব্যায়ামও হবে, শরীরও সুস্থ থাকবে।
উপসংহার
রমজানে রোজা রেখে সারাদিন অভুক্ত থাকার পর অনেকেই অভ্যাসের তাড়নায় ইফতারে ভুল খাবার খেয়ে ফেলেন। শুধু ইফতারেই নয় বরং রাতে এমনকি সেহেরিতেও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে পড়ে বিরূপ প্রভাব। তাই রমজানের প্রতিদিন উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে খাবার গ্রহণ করলে, সুস্থতা সঙ্গী হবে সকলের।
রেফারেন্স
Comments will be approved before showing up.