মধুর উপকারিতা: প্রকৃতির স্বাস্থ্যকর উপহার

September 11, 2023 1 Comment

মধুর উপকারিতা: প্রকৃতির স্বাস্থ্যকর উপহার

পৃথিবীতে প্রকৃতিকভাবে পাওয়া উপাদান গুলোর মধ্যে এবং যা একসাথে ঔষুধ,রূপচর্চা ও খাবার হিসেবে ব্যবহার হয় মধু অন্যতম।  প্রাচীনকাল থেকে মানুষ তার প্রয়োজনে মধু ব্যবহার করে আসছে । গবেষকদের মতে ১০০ গ্রাম মধুতে ২৮০ ক্যালোরি থাকে।মধু সাধারনত মৌচাক ও ফুল হতে সংগ্রহ করা হয়। একটি কথা প্রচলিত রয়েছে যে মধু কখনই নষ্ট হয় না এবং এর গুনাগুন বলে শেষ করা যায় না। মধুর উপাদান গুলোর মধ্যে সুগার অন্যতম।সেজন্য অনেকেই মধু এড়িয়ে চলি বিশেষ করে যাদের ডায়বেটিস রয়েছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এই নেয়ামত মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ এ দুটি সরাসরি মেটাবলাইজড হয়ে যায় এবং ফ্যাট হিসাবে জমা হয় না।যার ফলে আমাদের শরীরের ক্ষতি হয় না। চলুন আজকের আর্টিকেলে আমরা মধুর উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাকঃ

কাশির সমস্যার ক্ষেত্রে

  আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের কাশি এবং হুপিং কাশি সম্পর্কিত অনেক ধরণের সমস্যা রয়েছে। কাশি একটি অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা যার ফলে বুকে ব্যথার পাশাপাশি মাথাব্যথাও করে। কাশির সমস্যা খুব দ্রুত সমাধানে মধু খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। সকালে ও সন্ধ্যায় নিয়মিত ১ চা চামচ মধু ও আদার রস মিশিয়ে খেলে কাশির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

https://www.gleneagles.com.sg/zh/health-plus/article/coughing-after-covid

সুস্থ হার্টের জন্য মধু

আমাদের পৃথিবীতে প্রায় ১৫% মানুষ হার্ট জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। যার অন্যতম কারন হল কোলেস্টেরল। মধু আমাদের দেহে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে । যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায় এবং হার্ট ভালো থাকে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

  আমরা অনেকেই রয়েছি যারা নিজেদের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বেশ চিন্তিত। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন পন্থা অনুসরণ করেও আমরা কোনো স্বস্তি পাই না, সেক্ষেত্রে মধু আমাদের জন্য খুবই কার্যকরী হতে পারে।প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একগ্লাস গরম পানির সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে খান। দেখবেন ১ মাসের মধ্যে ভালো সুফল পাবেন।

https://www.donovitz.com/service/weight-management

ভালো ঘুমের জন্য 

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারি না ।যখন আমরা ঘুমাতে যাই তখন আমাদের মাথায় বিভিন্ন চিন্তা আসে এবং আমাদের রাতে ভালো ঘুম হয় না ।কিন্তু মধুতে এমন একটি উপাদান রয়েছে যা আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এবং সেটি হল কার্বোহাইড্রেট । রাতে ঘুমানোর আগে  এক গ্লাস উষ্ণ দুধে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন ভালো ঘুমের জন্য।

ত্বকে ব্রনের সমস্যা হলে

আমাদের প্রায় সকলেরই ব্রণের সমস্যা থাকে ।যা খুব বিরক্তিকর হয় ।যখন মুখের ব্রণ বা কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের  মধু এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে ১৫থেকে ২৫মিনিট পর  ঊষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন এবং প্রতিদিন না হলে সপ্তাহে অন্তত দুবার ব্যবহার করুন। মুখের ব্রণ ও কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।

জন্ডিসে সমস্যার ক্ষেত্রে

জন্ডিস আমাদের মানবদেহের নীরব ঘাতক হিসেবে সুপরিচিত, জন্ডিসের কারণে প্রতি বছর প্রায় বহু মানুষ মারা যায়। জন্ডিস সমস্যা সমাধানে মধু খুবই কার্যকরী হতে পারে।৫-৬ পিছ পাকা আমের সাথে মধু মিশিয়ে সকাল সন্ধ্যা খাবেন দেখবেন জন্ডিস খুব দ্রুতই সেরে উঠেছে।

এলার্জি জন্য 

মানবদেহে প্রচলিত সমস্যাগুলোর মধ্যে এলার্জি অন্যতম। ধুলাবালি সহ নানান কারনে আমাদের এলার্জি হতে পারে। মধুতে প্রকৃতিক ভাবে অ্যান্টি ইনফ্লামেটারি ও অ্যান্টি ভাইরাল প্রপাটি থাকে। যা এলার্জি সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকারি।


চুলের যত্নে মধু 

চুলের যত্নে মধু অপরিহার্য একটি উপাদান। অনেকেই জানে না যে চুলের যত্নে মধু ব্যবহারের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বক এবং চুল উভয়ই ভালো রাখতে সাহায্য করে। এখন আপনাদেরকে জানাবো চুলের যত্নে কিভাবে মধু ব্যবহার করবেন।

https://www.donovitz.com/service/weight-management

নারকেল তেলের সাথে

নারকেল তেলের সাথে মধু মিশিয়ে আপনি একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করতে পারেন। এটি আপনার চুল লম্বা করতে সাহায্য করবে এবং চুলের রুক্ষতা দূর করবে। নারকেল তেলের সঙ্গে হাফ কাপ মধু মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে হালকা ভাবে মাসাজ করতে থাকুন। ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। চেষ্টা করবেন সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করার।

ভিনেগারের সাথে

আমরা বাইরে যাওয়ার ফলে আমাদের চুল অনেক বেশি ময়লা হয়ে যায়। বাইরের ধুলাবালি সহজেই আমাদের চুলে আটকে যায় এবং আমাদের চুলকে রুক্ষ করে ফেলে। এছাড়াও মাথার ত্বকে ব্যাকটেরিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী হচ্ছে ভিনেগারের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবং এটি মাথার ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে শ্যাম্পু করতে পারেন। চেষ্টা করবেন সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করার ‌।


 

কলার সাথে

আমরা সকলেই জানি কলা আমাদের চুলের জন্য কত উপকারী। এটি আমাদের চুলকে সিল্কি এবং শাইনি করতে সাহায্য করে। দুটো কলা নিয়ে নিন এবং তার সাথে এক কাপ মধু মিশিয়ে নিন। আপনি চাইলে সাথে অলিভ অয়েল ও মিক্স করতে পারেন। এবার এই মিশ্রণটি চুলে লাগান। ৩০ মিনিট পর চুলটি শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও এই মিশ্রণটি তুলে লাগানোর চেষ্টা করুন।

ত্বকের যত্নে মধু

মধু আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সাধারণত যেকোনো ধরনের ত্বকের মানুষ মধু ব্যবহার করতে পারে। তাদের যাদের অতিরিক্ত এলার্জিপূর্ণ সেনসিটিভ ত্বক তারা মধু ব্যবহারে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু মধু আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি আমাদের ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে এবং ত্বকে করে মসৃণ ও নমনীয়। এখন আপনাদেরকে জানাবো ত্বকের যত্নে মধুর কিছু ব্যবহার:

শুষ্ক ত্বকের যত্নে

শুষ্ক ত্বকের জন্য মধু সবচেয়ে বেশি উপকারী। তাই শীতের দিনে শুষ্কতা রোধ করতে অনেকেই মুখে মধু ব্যবহার করে থাকে। মধুর সাথে কিছু উপাদান মিশিয়ে আপনি ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। কিছু চন্দন গুরু নিয়ে নিন এবং তার মধ্যে পানির বদলে মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবং মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিটের মত অপেক্ষা করে মিশ্রণটি শুকিয়ে আসলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও আপনি চাইলে কাঁচা হলুদের সাথে মধু মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। আরো একটি ভাল ফেসপ্যাক হল দুধের সাথে মধু মিশিয়ে রাতে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন এটি আপনার ত্বককে আরো বেশি উজ্জ্বল করে তুলবে।

মিশ্র ত্বকের যত্নে

মিশ্র ত্বক সাধারণত একেক ঋতুতে এক এক রকম হয়ে থাকে। তবে যদি আপনার এলার্জির কোন সমস্যা না থাকে আপনি প্রতিনিয়তই মধু ব্যবহার করতে পারবেন। এক কাপ পুদিনা পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে নিন এবার কিছুটা গোলাপজল এতে যুক্ত করুন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চেষ্টা করবেন একদিন পরপর এই মিশ্রণটি ব্যবহার করার।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে 

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মধু খুব উপকারী। অনেক সময় তৈলাক্ত ত্বক অনেক বেশি নিষ্প্রাণ দেখা যায়। আপনি মুলতানি মাটির সাথে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করবে পাশাপাশি আপনার ত্বককে মসৃণতাও দেবে। এছাড়াও এমনিও আপনি মধু লাগাতে পারেন। এটিও বেশ উপকারী।

মধুর ভিন্ন প্রজাতি ও তাদের উপকারিতা

আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না মধুরও বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। আজ আপনাদেরকে জানাবো বিভিন্ন প্রকার মধু সম্পর্কে।

মানুকা মধু: এই মধু সবচেয়ে বেশি ওষুধিগুণ সম্পন্ন হয়ে থাকে। একে মধুর রাজা বলেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। অন্যান্য মধুর তুলনায় এই মধুর দাম তুলনামূলকভাবে অনেকটা বেশি হয়ে থাকে। এই মধুতে থাকা উপস্থিত অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান আমাদের শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। মানুকা মধুর উৎপত্তিস্থল হল নিউজিল্যান্ড। বলা হয় ঝোঁক জাতীয় কোন একটি উদ্ভিদের ফুল থেকে এই মধু উৎপন্ন হয়ে থাকে। সর্দি কাশি পেটের যে কোন সমস্যা এবং বিভিন্ন ক্ষত সারাতে এই মধু অনেক বেশি কার্যকর।

এলভিস মধু:

বহুমূল্যবান এই মধু বাজারের সবচেয়ে দামি মধুর হিসেবে পরিচিত। ধারণা করা হয় এর এক কেজি মধুর টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কেনা যাবে। তাহলে ভাবুন এই মধুর দাম কত বেশি। এই ১ কেজি মধুর দাম ৬০০০ ডলার। এই মধু উৎপাদিত হয়ে থাকে তুরস্কে। এবং সংগ্রহের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্বতারোহীদের প্রয়োজন হয় কারণ ৪০০ মিটার গভীর গুহা থেকে এই মধুর সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

ইউক্যালিপটাস মধু:

এই মধু উৎপাদিত হয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়াতে। ইউক্যালিপটাস গাছে সাধারণত নভেম্বর ডিসেম্বর মাসের দিকে ফুল ফোটে এবং এই সময়টাতেই ইউক্যালিপটাস মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এই মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি। যা মাথা ব্যাথা এবং সর্দি দূর করতে সাহায্য করে এছাড়াও ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে সাহায্য করে। এবং এই মধুর স্বাদটা কিছুটা হারবাল ধরনের।

ক্লোভার মধু:

এ মধু উৎপন্ন হয়ে থাকে কানাডা এবং নিউজিল্যান্ডে। এবং বিশ্বব্যাপী এই মধু অনেক বেশি জনপ্রিয় যেকোনো সুপার শপেই পাওয়া যায়। চা-কফি বারবিকিউ যে কোন খাবারে এই মধু ব্যবহার করা যায় এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যে কোন খাবারকে স্বাদের গুনে অতুলনীয় করে থাকে এই মধু।

আলফালফা মধু:

এই মধুর উৎপত্তিস্থল কানাডায়। বেগুনি এবং হালকা নীল বর্ণের আলফালফা ফুল থেকে উৎপত্তি হয় এই মধুর। এবং এই মধুতে ফুলের সুবাস পাওয়া যায়। যেকোনো ধরনের খাবার তৈরিতে এই মধু ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে কেক বিস্কুট দই তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এই মধু। এতে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই মধু অনেক বেশি উপকারী।

ল্যাভেন্ডার মধু:

নাম শুনে বুঝাই যাচ্ছে ল্যেন্ডার ফুল থেকেই উৎপত্তি হয় এই মধুর। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো এসিড, চিনি,‌ ভিটামিন সি এবং এনজাইম। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। যেকোনো ধরনের চুলকানি রোগ দূর করতে এই মধু সাহায্য করে। এছাড়াও ফাঙ্গাল ইনফেকশনে এই মধু ব্যবহার করা যায়।

মধু সংরক্ষণের উপায়

মধু সংরক্ষণ করা খুব একটি কঠিন কোন বিষয় নয়। আপনি ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে সাধারণত মধু ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করার চাইতে কোন অন্ধকার স্থানে রেখে দেওয়া ভালো। এতে করে অনেকদিন পর্যন্ত মধু ভালো থাকবে ‌।

মধুকে সাধারণত সব রোগের ওষুধ বলা হয়। এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার অসুখকে সারাতে সাহায্য করে। তাই প্রত্যেক মানুষেরই উচিত নিয়মিত এক চামচ করে হলেও মধু খাওয়া। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।



1 Response

Md Arif Tarafder
Md Arif Tarafder

December 13, 2023

Very Informative .

Leave a comment

Comments will be approved before showing up.

Subscribe