আপনার কি শীতে পেটে সমস্যা হয়? শুনতে খুব অবাক লাগলেও, শীতকালে স্বর্দি-কাশির পাশিপাশি পেটের বিভিন্ন সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক।
শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সাথে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই কম তাপমাত্রার বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করে দেয়. যার ফলে ঠান্ডা, জ্বর, কাশিসহ পেটেরও নানান সমস্যা দেখা দেয়। তন্মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হচ্ছে পেটে ব্যথা।
কিন্তু চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই ব্লগে আমরা শীতে পেটের সমস্যার কারণসহ কি কি নিয়ম মেনে চললে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তা আলোচনা করব। সেই সাথে থাকছে শীতে পেটের সমস্যা প্রতিরোধের কিছু ঘরোয়া উপায়।
শীতকালে পেটে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বদহজম, গ্যাস, ডায়রিয়া, অন্ত্রের পেশির সংকোচন, পেটে ব্যথা ইত্যাদি।[ 1 ] শীতে পেটে ব্যথা হলে তা ‘কোল্ড স্টোমাক’ নামে বেশি পরিচিত। [ 2 ]
শীতেকালে পেটের এই বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার পেছনে কারণগুলো চলুন জেনে নেয়া যাক।
কুয়াশার চাদরে মুড়ি দেয়া শীতের সন্ধ্যাগুলোতে ভাজাপোড়া খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায় । ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ডুবো তেলে ভাজা গরম ধোঁয়া উঠা পিয়াজু বা পুরি মুখে নিয়ে আড্ডা না দিলে যেন আমাদের শীতটাকে অনুভব করাই হয় না।
কিন্তু এই তেলে ভাজা খাবারগুলো যে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় তা আমরা মানতে নারাজ। ভাজাপোড়া বেশি খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস হয় এবং শীতে পেটে ব্যথা হতে পারে।
গ্যাস এর কারণে পেট ব্যথার লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- পেটে চাপ অনুভব করা, পেট ফোঁপা বা ফুলে থাকা, খাওয়ার সময় বা ঠিক পরে বার বার ঢেঁকুর তোলা। [ 3 ]
এছাড়া শীতের মৌসুম মানেই বিয়ে-শাদি, ভ্রমনের সময়। ফলে অনেকেরই বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে শীতে ডায়রিয়া (ট্রাভেলারস ডায়রিয়া), ফুড পয়জনিং সমস্যা দেখা যায়। [ 4 ]
শীতে পেটের সমস্যা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো পানি কম পান করা। ভেবে দেখেছেন কি গরমকালে আমাদের যে পরিমাণে পানি পিপাসা পায় শীতকালে পায় না। যার ফলে পানি কম পান করা হয়। তাই নয় কি?
একদম! আর এই পানি কম পান করার ফলে স্বভাবতই পেটে গ্যাস এর সমস্যা দেখা দিতে পারে ফলে পেট ব্যথা হতে পারে।
যদিও সাধারণত আমরা বলে থাকি দৈনিক ৮ গ্লাস পানি পান করার কথা। তবে গবেষণানুযায়ী, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দৈনিক ১৫.৫ কাপ বা ৩.৭ লিটার এবং একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর ১১.৫ কাপ বা ২.৭ লিটার পানি পান করা উচিত। [ 5 ]
শীতে পানি পান করার এই পরিমাণটা কমে আসে আমাদের অধিকাংশেরই, যার ফলে শীতকালে পেটে সমস্যা দেখা দেয়।
শীতকাল এলেই তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে, বাইরের কম তাপমাত্রার সাথে খাপ খাওয়াতে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করা শুরু করে দেয়। [ 6 ]
আবার কখনও কখনও শীতের ঠাণ্ডা আবহাওয়ার ফলে পাচনতন্ত্রের উপর অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি হয়ে পেট ফোঁপা, পেট মুড়ানো, এমনকি ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া শীতকালে আমাদের মধ্যে আলসেমিটা বেশি কাজ করার দরুণ শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও কিছুটা দুর্বল হয়ে পরে। এ সকল কারণেই মূলত শীতের শুরুতে ঠাণ্ডা-কাশিসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে খুব সহজেই পরিপাকতন্ত্র আক্রান্ত হয় আর ডায়রিয়া, বদহজমসহ পেটে নানা সমস্যা দেখা দেয়। [ 7 ]
শীতে পেটের সমস্যা হলে চিন্তার কিছু নেই। গুরুতর সমস্যা না হলে ঘরোয়া উপাদানেই পেটে সমস্যার প্রতিরোধ এবং সমাধান সম্ভব।
শীতে গ্যাস্ট্রিক, পেটে ব্যথাসহ অন্যান্য পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকরী কিছু উপায় হলোঃ
শীতকালে হঠাৎ পেটে ব্যথা? হালকা কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে পান করুন। পেট ব্যথা কমাতে কিছুটা সহায়ক হতে পারে। [ 8 ]
শীতে পেটের যত্ন নিতে ক্যামোমাইল চা পান করুন। এটি পেটের যেকোনো ধরণের ব্যথা, প্রদাহ দূর করতে সহায়ক। [ 9 ]
বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য দূরীকরণে এলোভেরা অনেক উপকারী। পেটের অধিকাংশ সমস্যায় (অস্বাস্থ্যকর গাট, হজমে সমস্যা, গ্যাস) ২/১টি এলোভেরার জুস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেলে আরাম পাওয়া যায়। [ 10 , 11 ]
আদায় “অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি” বা প্রদাহ বিরোধী উপাদান রয়েছে, যা পেটের প্রদাহ বা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা দূরীকরণে খুবই কার্যকরী। [ 12 ] এছাড়া, শীতে পেটে ব্যথা কমানোর জন্য আদা চিবিয়ে খাওয়া যায় বা আদা চা খেতে পারেন।
শীতে পেটের সমস্যা অতিরিক্ত মনে হলে বা সমস্যা কোনোভাবেই না কমলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।
শীতকালে শুধু পেটের সমস্যা নয়, দেহের যেকোনো অঙ্গের সমস্যাই খুব যন্ত্রণাদায়ক। তাই শীতে পেটে ব্যথাসহ পেটের নানান সমস্যা এড়িয়ে চলতে আগে থেকেই হতে হবে সতর্ক। এজন্য অল্প কিছু নিয়ম মেনে চললেই শীতকালে পেটের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সুতরাং, শীতে পেটের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে করনীয় কাজগুলো হলো-
শীতে পেটে ব্যথা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রতিরোধে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে যা কোষ্টকাঠিন্য, পেট মুড়ানো প্রতিরোধে সহায়তা করবে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় দেহের মেটাবলিজম ক্রিয়াও কিছুটা ধীরগতির হয়ে যায় তাই বেশি বেশি পানি পান হজমে সহায়তা করবে।
শীতকালীন শাক-সবজি বেশি পরিমাণে খেতে হবে। এগুলো দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । ফলে শীতকালে গ্যাস্ট্রিক, পেটে প্রদাহ ইত্যাদি সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
শীতে অতিরিক্ত মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার যতটা পারা যায় কম খেতে হবে। তাহলে পেটে গ্যাসের সমস্যা, বদহজম, ডায়রিয়া এড়ানো যেতে পারে। [ 13 ]
শীতে পরিবর্তিত তাপমাত্রার সাথে দেহকে খাপ খাওয়াতে ও অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে যতটা সম্ভব শরীরকে উষ্ণ রাখার চেষ্টা করতে হবে। [ 14 ] এজন্য শীতে ঠাণ্ডা পানিকে একদমই না বলে, কুসুম গরম পানি পান করার অভ্যাস করা যেতে পারে।
এছাড়া শীতে শরীরকে উষ্ণ রাখতে সর্বদা নড়াচড়া বা কাজে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে।
আপনার যদি প্রায়শই শীত এলে পেটে সমস্যা হয়, তাহলে শীতকালে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেন। বেশি বেশি রঙিন শাক সবজিসহ হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক এমন সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে।
পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং বাসি খাবার এড়িয়ে ঢাকা, টাটকা ঘরের তৈরি খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেহেতু, বেশিরভাগ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ঠাণ্ডায় তুলনামুলক বেশি সচল থাকে, ফলে শীতকালে ব্যাকটেরিয়াজনিত ফুড পয়জনিং ও ডায়রিয়া এড়াতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা আবশ্যক। [ 15 ]
আমরা আমাদের ব্লগের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। কিন্তু আমরা আশাবাদী যে ব্লগটি সম্পূর্ণ পড়ার পর শীতে পেটে সমস্যা হওয়ার কারণ এবং তা থেকে পরিত্রাণের উপায়গুলো সম্পর্কে আপনাকে অবগত করতে পেরেছি।
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরে উল্লিখিত ৫টি নিয়ম মেনে চললে শীতে পেটের সমস্যা নিয়ে আর ভুগতে হবে না। আর সেই সাথে পেট ব্যথাসহ অন্যান্য পেটের সমস্যা দূরীকরণের কার্যকরী টিপসতো রয়েছেই। এগুলো মেনে চললে আশা করছি যে আপনাকে শীতকালে আর পেটের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে না।
ব্লগটি যদি আপনার এক চিলতে পরিমাণেও উপকারে এসে থাকে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু!
শীতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতলা পায়খানা, বমি, খাদ্যাভ্যাসের কারণে পেটব্যথা, বদহজম, ডিহাইড্রেশনের কারণে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফোঁপা ইত্যাদি পেটের সমস্যা দেখা দেয়।
হ্যাঁ, শীতকালে হজম ক্রিয়া কিছুটা মন্থর হতে পারে। এর কারণ:
মেটাবলিজম ধীর হয়ে যাওয়া:
ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরের মেটাবলিজমের গতি কমে যায়, যা খাবার হজমের সময় বাড়িয়ে দেয়।
শরীর কম সক্রিয় থাকা:
শীতকালে শারীরিক কার্যকলাপ বা ব্যায়ামের পরিমাণ কমে যায়, যা হজম প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
ভারী খাবারের প্রবণতা:
শীতকালে উচ্চ-ক্যালোরি এবং চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হয়, যা হজমে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
পানি কম পান করা:
ঠান্ডার কারণে অনেকেই পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, যা হজম প্রক্রিয়া মন্থর করে।
হ্যাঁ। মূলত, গ্যাস্ট্রিকের কারণে শীতকালে পেট ফুলে পেটের সমস্যা হতে পারে। শীতে পেট ফুলে গেলে বা পেট ফেঁপে থাকলে আদা খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া আপেল সাইডার ভিনেগার বদহজম ও পেট ফোলা কমাতে সাহায্য করে।[ 16 ] শীতে এ ধরণের সমস্যা এড়াতে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে এবং সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে।
শীতকালে পেটে ব্যথা হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে, যা ঠান্ডা আবহাওয়া এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর কারণগুলো হলো:
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা:
শীতকালে মসলাযুক্ত, চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া এবং পানি কম পান করার কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ে, যা পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে।
পেটে গ্যাস জমা:
হজম ধীর হয়ে যাওয়ার কারণে পেটে গ্যাস জমে ব্যথা হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য:
ঠান্ডায় পানি ও আঁশযুক্ত খাবার কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, যা পেটে ব্যথার অন্যতম কারণ।
ঠান্ডাজনিত ইনফেকশন:
শীতে ঠান্ডা খাবার বা পানীয় খেলে বা হজমে সমস্যা হলে ডায়েরিয়া বা ইনফেকশন হতে পারে, যা পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে।
ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS):
ঠান্ডা আবহাওয়ায় স্ট্রেস ও হজম সমস্যা IBS বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে।
শীতকালে গ্যাস বেশি হওয়ার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলোঃ
ধীর মেটাবলিজম:
ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরের মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়, যা খাবার হজমে বেশি সময় নেয় এবং গ্যাস তৈরি করতে পারে।
কম পানি পান করা:
শীতকালে পানি পিপাসা কম পায় বলে ঠাণ্ডায় পানি কম পান করা হয় ফলে পেটে গ্যাস হয়।
গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার খাওয়া:
শীতকালে শিম, মটরশুটি, মসুর ডাল, কাঁচা সবজি এবং ভাজাপোড়া খাবার বেশি খেলে গ্যাসের সমস্যা বাড়ে।
মসলাযুক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার:
শীতে মসলাযুক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার কারণে পেটে গ্যাস বেশি হয়।
হজম প্রক্রিয়ার ধীর গতি:
শীতে শারীরিক কার্যকলাপ কম থাকে, ফলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং পেটে গ্যাস জমে।
ঠান্ডা খাবার বা পানীয়:
ঠান্ডা খাবার বা পানীয় হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায় এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
গরম খাবার অতিরিক্ত খাওয়া:
শীতে অনেকেই অতিরিক্ত গরম ও ভারী খাবার খেয়ে ফেলেন, যা পেটের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
সহজ ১০ টি হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় জেনে নিন |
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাগুলোর লক্ষণ কি কি? এর সমাধান কি ?
Comments will be approved before showing up.