আপনি কি ঘাড় ব্যথার কারণে ঘুম থেকে উঠে সুন্দর সোনালী সকালটা উপভোগ করতে পারেন না? অথবা এই যন্ত্রণার কারণে ঠিকমতো ঘুমাতেই পারছেন না? ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না কেন এরকম অসহ্য ব্যথা হচ্ছে এবং কিভাবে এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন?
আপনি এক নন, ২০২০ সালের একটি রিসার্চে পাওয়া গেছে ২০৩ মিলিয়ন মানুষ ঘাড়ব্যথায় ভোগে। শুধু তাই নয়, ২০৫০ সালের মধ্যে এটা ৩২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৬৩ মিলিয়নে পৌছাবে। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এর ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।
চিন্তা করবেন না! এই ব্লগে আপনি শুধুমাত্ৰ ঘাড় ব্যথার কারণ ও প্রতিকারই নয়, বরং ঘাড় ব্যথা হলে করণীয় এবং এই থেকে মুক্তির উপায়ও পেয়ে যাবেন। তাই আর দেরি না করে, চলুন শুরু করা যাক!
ঘাড় ব্যথা অনেক কমন একটি সমস্যা, যা অনেক মানুষকেই তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ভুগিয়ে থাকে। সামান্য থেকে শুরু করে তীক্ষ্ণ ব্যথা, বিভিন্নভাবেই এটা আপনার সুস্থ জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। চলুন তাহলে ঘাড় ব্যথার কারণ জেনে নেয়া যাকঃ
ভারী জিনিস তোলা বা খেলাধুলার কারনে পেশীতে টান পড়তে পারে এবং এ থেকে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে ঘাড় স্থির অবস্থানে রেখে কোন কাজ করলেও ঘাড়ে চাপ পড়ে। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে একটি সিলিং আঁকা।
ঘাড় ব্যথার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে বার্ধক্য। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেরুদণ্ডের হাড়, জয়েন্ট এবং ডিস্ক স্বাভাবিকভাবেই সময়ের সাথে সাথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এসময়ে অস্টিওআর্থারাইটিস, হার্নিয়েটেড ডিস্ক এবং স্পাইনাল স্টেনোসিসের মতো সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। এগুলো স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং ব্যথা সৃষ্টি করে।
কম্পিউটারে দীর্ঘসময়ে কাজ করা, বিছানায় শুয়ে বই পড়া, টিভি দেখা, দীর্ঘসময়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকা, ভুল ভঙ্গিতে শুয়ে বা বসে থাকলে ঘাড়ের পেশীতে চাপ দিতে পারে। এগুলো ঘাড় ও বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথার কারন হতে পারে।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ঘাড় ব্যথার কারন হতে পারে। আপনি যখন মানসিক চাপে থাকেন, তখন আপনার অজান্তেই আপনার ঘাড়ের পেশীতে টান পড়তে পারে। এ থেকে ঘাড় ব্যথা এবং অস্বস্তি হতে পারে।
ভুল ব্যায়াম কৌশল বা খেলাধুলার সময় অতিরিক্ত পরিশ্রম ঘাড় ব্যথার কারণ হতে পারে। তাই, খেলাধুলা এবং ব্যায়ামের সময় সঠিক ফর্ম ব্যবহার করা এবং টান প্রতিরোধ করতে অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঘাড়ের পেশীগুলির আকস্মিক, অনিচ্ছাকৃত সংকোচনের ফলে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই খিঁচুনিগুলি স্ট্রেস, অতিরিক্ত ব্যবহার বা ঘাড়ের অন্তর্নিহিত অবস্থার কারণে শুরু হতে পারে এবং প্রায়শই ঘাড়ের ব্যথার অন্যান্য উপসর্গের সাথে দেখা যায়।
ঘাড়ের ব্যথা অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও হতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, মেনিনজাইটিস, ক্যান্সার, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদি রোগ ঘাড়ের ব্যথার কারণ হতে পারে। এগুলি টিস্যুকে স্ফীত করে, হাড়ের ক্ষতি করে বা আপনার ঘাড়ের স্নায়ুতে চাপ দেয়।
ঘাড়ে ব্যথার শুরুর আগেই কিছু কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায়, আপনার ঘাড়ে বেথা হতে পারে। তীক্ষ্ণ ব্যথা, ঘাড় শক্ত হওয়া, পেশি টানটান হওয়া, বাহু ও হাতে দুর্বলতা অনুভুত হওয়া ঘাড় ব্যথার লক্ষণ।
যদি আপনার ঘাড়ে ব্যথার সাথে আঁটসাঁট অনুভূত হয় তবে এটি স্ট্রেন বা টানের লক্ষণ হতে পারে। এটি নড়াচড়া না করে অনেকক্ষণ বসে থাকার পরে ঘটতে পারে।
এই ধরনের ব্যথা সাধারণত এক জায়গায় হয় এবং আপনি যখন খুব বেশিক্ষণ এক অবস্থানে থাকেন, যেমন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা বা গাড়ি চালানোর সময় এটি আরও খারাপ হতে পারে।
কখনও কখনও ঘাড়ের সমস্যার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। এসময়ে ঘাড় ব্যথা ঘাড়ের পিছনে থেকে শুরু হয়ে সামনের দিকে চলে যায়।
আপনার ঘাড়ের পেশীতে হঠাৎ করে টানটান অনুভূতি ব্যথার লক্ষণ হতে পারে। মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত কাজ করলে এই পেশীর এই খিঁচুনি হতে পারে।
যদি আপনার মাথা ঘোরানো কঠিন হয় বা আপনি এটিকে স্বাভাবিকের মতো নাড়াতে না পারেন তবে এটি আপনার ঘাড়ের পেশী বা জয়েন্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
যদি আপনার বাহু বা হাত দুর্বল বোধ করে তবে এটি হতে পারে কারণ আপনার ঘাড়ের স্নায়ু চাপের মধ্যে রয়েছে।
ঘাড়ে কোন আঘাত বা অন্তর্নিহিত কোন সমস্যার জন্য ঘাড়ে প্রদাহের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা দুর্বল immune system কম থাকলে অল্পতেই ঘাড় ঘাড় ফুলে যাওয়া সহ নানারকম সমস্যা হতে পারে।
ঘাড় ব্যথা হলে গরম ও ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন, বিশ্রাম নিন, হালকা স্ট্রেচিং ও মাসাজ করুন। পাশাপাশি সঠিক ভঙ্গিমায় বসে কাজ করা এবং কিছু খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন যা immune বুস্ট করে। এগুলো আপনার ব্যথা উপশমে সাহায্য করবে।
ঘাড়ে ব্যথা থাকলে ভারী জিনিস তোলা এড়িয়ে চলুন, আর ব্যথা বাড়ায় এমন কাজ কম করুন। আরামদায়ক পজিশনে শুয়ে থাকুন কিন্তু খুব বেশি সময় একই অবস্থায় না থাকাই শ্রেয়।
ব্যথা ও ফোলা কমাতে গরম কাপড়ের সেঁক বা আইস প্যাক ঘাড়ে লাগান। তবে মনে রাখবেন, বরফ সরাসরি চামড়ায় লাগাবেন না।
হালকা ব্যায়ামের সাহায্যে ধীরে ধীরে ঘাড়ের পেশীগুলো স্ট্রেচ করুন। এতে জড়তা ভাব কমবে এবং নমনীয়তা বাড়বে। তবে মনে রাখবেন, পেশী বা মাসেলের ওয়ার্ম-আপ করার এই ব্যায়ামগুলো করবেন।
সোজা হয়ে বসার অভ্যাস করুন এবং কাধ সোজা রাখুন। ঘুমের সময় মাথা খুব বেশি উপরে বা নিচে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। সঠিক দেহভঙ্গি বা পশ্চার ঘাড় ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
ক্রমাগত চলাফেরা করুন এবং ধীরে ধীরে ঘাড় স্বাচ্ছন্দ্যে নাড়ুন। এভাবে নড়াচড়া করলে বা হালকা ব্যায়াম করলে ঘাড় এবং হাঁটু ব্যথা উপশম হয়। পেশী সুস্থ রাখতে হলে, সক্রিয় থাকা জরুরি। পেশী कमजोर (komjor) হলে ঘাড়ের ব্যথা আরও বাড়তে পারে।
ঘাড়ে ব্যথা করা অংশে আলতো করে মালিশ করলে পেশীর টান আর ব্যথা কমতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি নিজে মালিশ করতে পারেন অথবা কোনো মাসাজ থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন।
আচ্ছা, আমরা এই ব্লগের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এখানে আমরা জেনেছি ঘাড়ব্যথার ঘাড় ব্যথার কারণ, প্রতিকার ও লক্ষণগুলো কি কি। এছাড়াও আমরা ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। তাই আশা করি, এই ব্লগটি আপনাকে ঘাড়ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।
শারীরিক ও মানসিক চাপ, বয়স, পেশীর খিঁচুনি, বিভিন্ন জটিল রোগ, অথবা আঘাত-জনিত কারণে ঘাড়ব্যথা হয়ে থাকে। এর থেকে মুক্তি পেতে আপনি ঘাড়ে মালিশ নিতে পারেন। এছাড়াও গরম বা ঠান্ডা সেঁক, বিশ্রাম নেয়া, সাধারণ স্ট্রেচিং এবং কম্পিউটারে কাজ করার সময় সোজা হয়ে বসার মতো অভ্যাসগুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
মনে রাখবেন, যদি আপনার ঘাড়ব্যথা দীর্ঘদিনের পুরোনো হয়ে থাকে অথবা কোনো দুর্ঘটনা-জনিত কারণে হয়ে থাকে তাহলে এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে মুক্তি নাও পেতে পারেন। এছাড়াও যদি আপনার ঘাড়ে ব্যথার পরিমান অত্যন্ত বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনার উচিত ডাক্তারের শরণাপণ্য হওয়া।
আর হ্যা, বয়স্ক ব্যক্তি যেমন আপনার বাবা-মার এরকম ব্যাথা অনুভূত হয়, তবে আপনার উচিত দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থ এবং সুন্দর জীবন-জাপন কামনা করে শেষ করছি। ধন্যবাদ।
প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের বিভিন্ন লক্ষণ থাকে যেমন মাথা ঘোরা, শারীরিক অস্বস্তি, মাথাব্যথা, এবং ঘাড়ব্যথাও একটি লক্ষণ হতে পারে। তবে ঘাড় ব্যথা হলেই যে উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে, এটা বলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ কোনো ধরনের লক্ষণ ছাড়াও প্রেসার বেড়ে যেতে পারে (5) ।
আপনার ঘাড়ে ব্যথা হলে উষ্ণ কাপড়ের সেঁক দিতে পারেন অথবা কোল্ড প্যাকও ব্যাবহার করতে পারেন। এছাড়াও বিশ্রাম নেওয়া, মৃদু স্ট্রেচ বা ব্যায়াম, এবং ম্যাসেজ করতে পারেন। এতে আপনার ঘাড়ব্যথা উপশম হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, কেন আপনার ঘাড়ে ব্যথা হয়েছে এটা জানা জরুরি। এটার ওপরেই নির্ভর করে আপনার এখন কি করা উচিত।
পিছনের দিকে ঘাড় ব্যথা বিভিন্ন ধরণের রোগের লক্ষণ হতে পারে। যেমন:
তবে কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া, আমরা সরাসরি বলতে পারিনা যে আপনার ঘাড়ব্যথা হয়েছে তাহলে আপনার এই রোগ হয়েছে। কেননা বয়স, আঘাত পাওয়া, পেশির খিঁচুনি সহ আরো বিভিন্ন কারণেও ঘাড়ের পিছনের দিকে ব্যথা হতে পারে।
Comments will be approved before showing up.
SYED NURUL HOQUE
June 27, 2024
Karkuma join guard