আপনি কি সবসময় শরীরে ক্লান্তি অনুভব করেন, ক্ষুধা লাগে, তীব্র তৃষ্ণা পায়, আবার প্রস্রাবেরও চাপ দেয়? তাহলে হতে পারে আপনার রক্তে গোপনে লুকিয়ে থাকা এক শত্রু আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। সেই শত্রুটি হল ব্লাড সুগার। হ্যাঁ, এই মিষ্টি শব্দটির পেছনে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা।
ব্লাড সুগার বা রক্তের গ্লুকোজের স্তর হলো এমন একটি বিষয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সঠিক মাত্রায় রক্তে সুগার থাকলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে, কিন্তু এই মাত্রা বেড়ে গেলে বা কমে গেলে দেখা দেয় ডায়াবেটিসের মতো নানা ধরনের সমস্যা।
দিন দিন ডায়াবেটিসের প্রকোপ বেড়েই চলেছে আমাদের দেশে। আর এই রোগের মূল কারণ হল ব্লাড সুগারের অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়া। আমার মতো আপনার মাথায়ও কি বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে? আসলে ব্লাড সুগার কি? এটা কেন হয়? এর লক্ষণ কি কি? কিভাবে এড়াবেন এই ভয়ঙ্কর সমস্যাকে?
তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন, চলুন আমরা একসাথে ব্লাড সুগারের আদ্যপান্ত বের করার চেষ্টা করি। যাতে আপনি এবং আপনার পরিবার একটি সুস্থ, সুন্দর, ও স্বাস্থকর জীবনযাপন কর পারে!
ব্লাড সুগার বা গ্লুকোজ হল আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস ( 1 )। আমরা যে খাবার খাই, বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি শরীরে গিয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয়। এই গ্লুকোজই রক্তের মাধ্যমে কোষে পৌঁছে শক্তি উৎপন্ন করে। যা আমাদের আমাদের সকল কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।
আমরা আগেই জেনেছি, যে খাবার খাই তার মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরে গ্লুকোজে পরিণত হয়। মানবদেহে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন আছে যা এই গ্লুকোজকে কোষে পৌঁছে দেয়। তারপর, এই কোষগুলো গ্লুকোজ ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করে।
যখন কোনো কারণে ইনসুলিন হরমোন কাজ করে না বা শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকে না, তখন কোষগুলো শক্তি উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত গ্লুকোজ বা সুগারের জোগান পাইনা। যার ফলে, তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিসও হতে পারে ( 2 )।
স্বাভাবিকভাবে, একজন সুস্থ মানুষের শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা (Blood Sugar) খালি পেটে ৭০-৯৯ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের মধ্যে থাকা উচিত। আর খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর এটি ১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার পর্যন্ত বিশেষ দুষ্চিন্তার কোনো কোনো কারণ নেয়।
অন্যদিকে ডায়াবেটিক্সের রোগীদের ক্ষেত্রে, খালি পেটে ১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার, এবং খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর এটি ১৮০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে থাকা উচিত।
তবে এই মাত্রা ব্যক্তিভেদে এবং অন্যান্য কারণ যেমন ওষুধ, ব্যায়াম, স্ট্রেস ইত্যাদির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। নিচের তালিকাটি দেখে আপনি আরো সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন ( 3 )।
পরীক্ষার সময় /ধরন | সুস্থ অবস্থায় | ডায়াবেটিস রোগী |
খালি পেটে | ৭০-৯৯ mg/dL | ১৪০ mg/dL এর কম |
খাবারের ২ ঘণ্টা পর | ১৪০ mg/dL এর কম | ১৮০ mg/dL এর কম |
র্যান্ডম ব্লাড সুগার | ৭০-১১০ | ২০০ এর কম |
A1C/(HbA1c) Result | ৩.৯ - ৫.৭ % | ৫.৭-৬.৪ % |
বি:দ্র: শিশু, গর্ভবতী নারী এবং কিছু চিকিৎসাগত অবস্থার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিসীমা ভিন্ন হতে পারে। যদি আপনার ব্লাড সুগার সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য রক্তে সুগারের মাত্রা নির্দিষ্ট কিছু সীমার মধ্যে থাকতে হয়। খালি পেটে ব্লাড সুগার যদি ১২৬ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি হয়, অথবা খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ব্লাড সুগার ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি হয়, তাহলে তা ডায়াবেটিস হিসেবে গণ্য করা হয় ( 7 )।
মনে রাখবেন, আপনার ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে নাকি নাই, তা নির্ধারণ করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। তবে, কিছু লক্ষণ দেখে আপনি কিছুটা ধারণা নিতে পারেন আপনি কি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত!
প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো অনেক সময় খুব সূক্ষ্ম হতে পারে এবং অনেকেই সেগুলো তেমন গুরুত্ব দেন না। তবে যদি আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো লক্ষ্য করেন, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
এছাড়াও, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলোও দেখা দিতে পারে:
আপনি যদি আপনার নিজের এই লক্ষণগুলো খুঁজে পান, তাহলে অতি দ্রুত আপনার ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা উচিত। (তথ্যসূত্র: 8, 9, 10)
হঠাৎ ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তবে অতিরিক্ত দুষ্চিন্তা করা যাবে না, মাথা ঠান্ডা রেখে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো আপনি নিতে পারেন:
এছাড়া, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধগুলি সঠিকভাবে গ্রহণ করুন। আশা করি এগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার বেড়ে যাওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সহজ ১০ টি হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় জেনে নিন |
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাগুলোর লক্ষণ কি কি? এর সমাধান কি?
ঘাড় ব্যথার কারণ কি? ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির সহজ ৬ টি উপায় |
কোমর ব্যথা কেন হয়? এই ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় কি?
ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার সঠিক পরিমান বজায় রাখা সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্বন, ডায়াবেটিস একটি জটিল রোগ যা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে, হ্যা এটাও মনে রাখা দরকার যে ব্লাড সুগারের মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় কমে গেলেও স্বাস্থঝুঁকির সৃষ্টি হয়। তাই সঠিক মাত্রায় শর্করার পরিমান বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে। যদি ইতিমধ্যে আপনার ডায়াবেটিস আছে, তাহলে ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা, রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন, এই ব্লগ পোস্টটি শুধুমাত্র তথ্যমূলক উদ্দেশ্যে যা কোনোভাবেই চিকিৎসাগত পরামর্শ হিসেবে বিবেচিত হবে না। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যার জন্য অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতেই! তাই আপনার সুসাস্থ কামনা শেষ করছি আজকের ব্লগটি, ধন্যবাদ!
ব্লাড সুগার বা রক্তের গ্লুকোজ অর্থ হলো রক্তে উপস্থিত একটি প্রকারের সুগার যা আমাদের শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। খাবার হজমের পর কার্বোহাইড্রেট গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়ে রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছে শক্তি উৎপন্ন করে।
ব্লাড সুগার কমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে, যার ফলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, ঘাম হওয়া, হাত-পা কাঁপা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, এবং জ্ঞান হারানোর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত কিছু মিষ্টি খাওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হ্যা, কিছু খাবার আছে যা আপনার ব্লাড সুগার কমাতে সহায়ক হতে পারে, যেমন:
অর্থাৎ, ফাইবারযুক্ত এবং শর্করামুক্ত খাবার রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তবে এটা আপনার মনে রাখতে হবে যে পরিমাণের তুলনায় বেশি অথবা ডাক্তারের পরামর্শের বাইরে কিছু খাওয়া যাবে না।
Comments will be approved before showing up.